চোর ধরাকে কেন্দ্র করে দুমাস আগে গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক নামের ভূমি অফিসের এক পিয়নকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল প্রতিপক্ষরা। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হামলা ও মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে যায় আসামিপক্ষের আড়াই শতাধিক পরিবার। এ সুযোগে বাদী পক্ষের লোকজন আসামিপক্ষের ঘরবাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুট চালায়।
তবে গ্রামবাসী আর হামলা, মামলা, সংঘাত, লুটপাট, ভাঙচুর চান না। সেই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেন দারা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেকের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুন, উপজেলা যু্বলীগের সহ-সভাপতি এম এম রফিকসহ কয়েকশ গ্রামবাসী ও নেতারা।
সংঘর্ষে না জড়ানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা আর হামলা, মামলা, সংঘাত, সংঘর্ষ, লুটপাট, ভাঙচুর চাই না। সবাই মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’
সমাবেশ শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীরা পলাতক গ্রামবাসীদের স্ব স্ব ঘরবাড়িতে তুলে দিয়ে আসেন। প্রায় দুইমাস পরে গ্রামে ফিরতে পেরে খুশি তারা।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চোর ধরাকে কেন্দ্র করে ১০ সেপ্টেম্বর সকালে ৫ নম্বর ওয়ার্ড ওয়ার্ড (ইউপি) সদস্য আব্দুস সাত্তারের সমর্থক ও কোমরকান্দি গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাককে (৫৫) হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। তিনি খোকসা উপজেলার একটি ভূমি অফিসের পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ঘটনার পরদিন নিহতের স্ত্রী রেবেকা খাতুন প্রতিপক্ষ শহিদুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ১৬ জনের নামে মামলা করেন। মামলায় শহিদুলসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা জেলহাজতে আছেন। হামলা ও মামলার ভয়ে পালিয়ে ছিলেন আসামিপক্ষের লোকজন। বৃহস্পতিবার শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে পলাতকরা গ্রামে ফিরলেন।
মামলার বাদী রেবেকা খাতুন বলেন, ‘তারা (আসামিপক্ষ) গ্রামে ফিরেছেন তাতে আমার কোনো বাঁধা নেই। কিন্তু নিজেরা কোনো অঘটন ঘটিয়ে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করলে, এর দায়িত্ব কে নেবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আসামিদের ফাঁসি চাই আমি।’
এ বিষয়ে আসামিপক্ষের নেতা ও ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ফিরোজ খাঁ বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় একজন হত্যার শিকার হন। হত্যা মামলার ভয়ে আড়ইশ পরিবার লোকজন প্রায় দুমাস পলাতক ছিল। কোটি কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। যাই হোক আমরা আর সংঘর্ষ চাই না। এখন শান্তিতে সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসীন হোসাইন বলেন, ‘পুলিশ সব সময় শান্তির পক্ষে আছে। শান্তি সমাবেশের আয়োজকদের সাধুবাদ জানাই। পুলিশ গ্রামটি নজরদারিতে রেখেছে।’
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দেশের আইনে বিচার হবে। তবে নিরীহ মানুষগুলো কেন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। এজন্য গ্রামবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শান্তি সমাবেশ করে পলাতকদের বাড়িতে ওঠানো হয়েছে। এর পরও যদি কেউ কোনো অঘটন ঘটায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।