ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে ও নেতৃত্ব শূন্য করতেই জাতীয় চার নেতাকে জেলের বদ্ধ কুঠুরিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যক্ষ ইউসুফ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর স্বাধীনতার বিপক্ষের কিছু সেনা সদস্য জেল হত্যার মতো নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী সেনা সদস্যরাই দেশ থেকে চলে যাওয়ার আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কারণে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আ হ ম কামরুজ্জামানকে।
তিনি আরও বলেন, জাতিকে নেতৃত্ব শূন্য করে মহান স্বাধীনতার চেতনা ও দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একই বছরের ৩ নভেম্বর এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
সভায় কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম মইনুল হোসেন বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে এবং জেলহত্যা ঘটিয়েছে তারা স্পষ্টত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ধ্বংস করে দেওয়া ও স্বৈরশাসনের অভ্যুত্থান ঘটানো। একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের মস্তিষ্ক থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ মুছে ফেলার মাধ্যমে পরাজিত শক্তির বাস্তবায়ন করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু তাদের সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না।
আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার। তিনি বলেন, জেল হত্যাকাণ্ডের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। এরফলে তৎকালীন সময়ে দেশে বিরাট একটি সংকট তৈরি হয়।
প্রধান সংকটগুলো হচ্ছে—
- জেল হত্যাকাণ্ডের ফলে বন্দির জন্য নিরাপদ আশ্রয় কারাগার অনিরাপদ হয়ে যায়।
- রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে আদর্শিক পরিবর্তন ঘটে।
- আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
- রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা পায়।
- সেনাবাহিনীতে দলাদলি ও গ্রুপিং সৃষ্টি হয়।
- রাজনীতিতে শুরু হয় নেতা বেচাকেনার খেলা এবং রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটে।
এসব সংকটের প্রভাবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নানানভাবে দেশে আরও নতুন-নতুন সংকট তৈরি হয়েছিল বলেও প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন।