চট্টগ্রাম সংবাদদাতা :: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় চাতরী চৌমুহনী কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির পদ থেকে সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নুর কামাল ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে বাদ দিয়ে রাতারাতি নতুন করে মোঃ শামসুল আলমকে ২০১নং সদস্য দেখিয়ে সাধারণ সম্পাদক বানানোর অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সভাপতি আনোয়ার হোসেন ২০০ সদস্যদের মধ্যে শুধুমাত্র ৪ জনকে নিয়ে রাতারাতি বৈঠক করে সহ-সভাপতি পদে আমিনুল হক এবং ২০১৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত সমিতিতে সদস্য হিসেবেও ছিল না এমন একজন ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে সভাপতি আনোয়ারা হোসেন স্বাক্ষর করে জাহাঙ্গীর আলম ও নুর কালামকে সংগঠন থেকে বাদ দেন।
এর আগে সংগঠনের নাম দিয়ে চাঁদাবাজি করায় গত ২৯ শে মার্চ সংগঠনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও অর্থ-সম্পাদক আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন চাতরী চৌমুহনী বাজারের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা।
ভুক্তভোগী কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, চাতরী চৌমুহনী কাঁচাবাজার সমবায় সমিতি ২০২১ হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদের একটি কমিটি ২০২১ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি, আমাকে সাধারণ সম্পাদক, আব্দুল হালিমকে অর্থ সম্পাদক এবং মোহাম্মদ আইয়ুব ও মোহাম্মদ মোক্তার হোসেনকে সদস্য করে চট্টগ্রাম জেলা সমবায় অফিসার শেখ কামাল হোসেন কমিটির অনুমোদন দেন।
কমিটি চলাকালীন সময়ে ২০০ জন সদস্য থেকে দৈনিক ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। যাহা মাস শেষে মোট টাকার পরিমাণ হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সভাপতি তার পছন্দের কয়েকজন সদস্যদের নিয়ে দৈনিক চাঁদাগুলোর কোন হিসাব না দিয়ে খরচ করে ফেললে আমি জাহাঙ্গীর আলম ও সহ-সভাপতি নুর কামাল প্রতিবাদ করি। এনিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় চাতরী চৌমুহনীতে সমিতির নামে চাঁদাবাজি শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।
তখন দোকানদাররা মিলে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সমবায় অফিসার এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দেন। অভিযোগটি উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সমাধান করে দেওয়ার জন্য বলে দেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মোকর্দ্দমা নম্বর ১৮/২০২২, ২৪শে জুলাই ২০২২ তারিখে গ্রাম্য আদালতে রায় দেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈধ এবং সদস্যদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার প্রয়োজন হলে তাহলে সমিতির নাম সম্বলিত রশিদ মূলে নিতে হবে এবং স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কিন্তু সভাপতি আনোয়ার হোসেন চাঁদা তুলা বন্ধ না করে রাতারাতি কয়েকজনকে নিয়ে গোপনে বৈঠক করে আমাকে এবং সহ সভাপতিকে বাদ দিয়ে আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি দরখাস্তে আব্দুল হালিম, মোক্তার হোসেন, আইয়ুব স্বাক্ষর করে সমবায় অফিসকে সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি পদটি দীর্ঘদিন শূন্য আছে এবং সমিতির কার্যকলাপে আমরা অংশ গ্রহণ করি না মর্মে অসত্য তথ্য দিয়ে নতুন দুই জনকে কমিটির পদ পদবী দিয়ে অবৈধভাবে তাদের নাম সংযুক্ত করে। এজন্য আমি সমবায় অফিসারকে সরেজমিনে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আকুল আবেদন জানায়। অন্যথায় আমি আদালতের শরণাপন্ন হব।
কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির একাধিক সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, এটা সভাপতি ও তার পছন্দের কয়েকজনের একক সিদ্ধান্ত। সভাপতি ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে আমাদের না জানিয়ে তার পছন্দের কয়েকজনকে নিয়ে বৈঠক করে দুইজনকে বাদ দেন। প্রয়োজনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হবে। কিন্তু রাতারাতি বৈঠকের নাম করে সমবায় সমিতিকে অসত্য তথ্য দিয়ে সমিতিকে যেমন ইচ্ছা তেমন করে চালাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে সমিতির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে ভোটের মাধ্যমে ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নির্বাচন করার দাবী জানান সাধারণ সদস্যগণ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাতরী চৌমুহনী কাঁচাবাজার সমবায় সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা সমবায় অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, চাতরী চৌমুহনী কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতি থেকে সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেনের স্বাক্ষরিত একটি দরখাস্ত দিয়েছে সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদটি দীর্ঘদিন যাবৎ শূন্য রয়েছে। যারা আগে ছিল তারা সমিতির বৈঠকে উপস্থিত থাকে না মর্মে আমি বিষয়টি জটিল মনে না করে সহজভাবে নিয়ে সুপারিশ করে জেলা সমবায় অফিসার মহোদয় বরাবরে পাঠায়েছি। অভিযোগ ফেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।