ঢাকা বুধবার, অক্টোবর ৪, ২০২৩

Popular bangla online news portal

একটি গ্রামকে বদলে দিয়েছে ‘ক্রিকেট ব্যাট’


নিউজ ডেস্ক
৩:২৯ - শুক্রবার, অক্টোবর ২৮, ২০২২
একটি গ্রামকে বদলে দিয়েছে ‘ক্রিকেট ব্যাট’

যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া গ্রাম। এ গ্রামকে সবাই এখন ব্যাট গ্রাম নামেই চিনেন। এক ব্যাট তৈরির কুটির শিল্প বদলে দিয়েছে গ্রামটিকে।

জানা গেছে, আড়াই যুগ আগেও এ গ্রামের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ছিল বেশ করুণ। তবে এই সময়ে গ্রামে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যাট তৈরির কারখানা। যেখানে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৪০০-৫০০ লোকের কর্মসংস্থান। এসব কারখানায় প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার ব্যাট তৈরি হচ্ছে। যার গুণগত মানও প্রশংসনীয়। ব্যাটের মান ভালো হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশের ৬৪ সব জেলাতেই। প্রতিদিন যশোর থেকে পরিবহন ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কারিগরদের কাছ থেকে ব্যাট সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। 

কারিগররা জানান, ১৯৮৬ সালে সর্ব প্রথম স্থানীয় সঞ্জিত রায় নামে এক কাঠমিস্ত্রি ব্যাট তৈরি শুরু করেন। এরপর তার দেখাদেখি প্রতিবেশীরাও তার কাছ থেকে নানা পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে কাজ শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে গ্রামে ব্যাট তৈরির কারিগরের সংখ্যা অর্ধশতাধিকে এসে দাঁড়িয়েছে। 

ব্যাট তৈরিতে কদম, জীবন, নিম, গুল্টে (পিটুলি), পুয়ো, ছাতিয়ান, ডেওয়া কাঠ ব্যবহার করা হয়। ভালোমানের ব্যাট তৈরি করতে নিম ও জীবন কাঠ বেশি ব্যবহৃত হয়। প্রকারভেদে ব্যাট প্রতি খরচ হয় ২০-১৫০ টাকা। পাইকারি বিক্রি হয় ৩০-২৫০ টাকা। ব্যাট তৈরি করতে কারিগরদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও সাহায্য করে থাকে।  

শরিফুল নামে এক কারিগর বলেন, গ্রামে সর্বপ্রথম সঞ্জিত নামে এক কাঠমিস্ত্রি ব্যাট তৈরি শুরু করেন। এরপর তার কাছ থেকে এক-দুইজন করে শিখে এখন গ্রামে কারিগরের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। ব্যাট তৈরির পেশায় এসে আগের থেকে মোটামুটি সচ্ছল আমরা।

সুধীর নামে আরেক কারিগর বলেন, ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা হওয়ায় গ্রামের মানুষ অন্ধকার থেকে আলো দেখছে। এ পেশার কারিগররা করোনার সময় অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে।

কারিগররা জানান, ব্যাট তৈরির কারুকাজ তাদের নখদর্পনে, কিন্তু আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট তৈরিতে যে পুঁজি দরকার তা তাদের নেই। এছাড়া জরুরি কাঠ বিদেশ থেকে আমদানি করতে পারলে দেশেই বিশ্বমানের ব্যাট তৈরি সম্ভব। এজন্য সহজ শর্তে ঋণ বা সরিকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নজর দিলে বিষয়টি আরও সহজ হবে।

রতন নামে এক কারিগর বলেন, আমাদের পুঁজি কম, মাল কিনতে হয় কম, বাকিতে মাল কিনলে লস হয়ে যায়। সরকার থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পেলে আমরা এ শিল্পের পরিধি বাড়িয়ে আন্তর্জাতিকমানের ব্যাট তৈরি করতে পারবো।

বিসিক যশোর কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ গোলাম হাফিজ বলেন, কুটির শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাট তৈরি কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য এ কাজে জড়িত কারিগররা বিসিকের স্বরণাপন্ন হলে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ, আর্থিক সহযোগিতাসহ সব রকমের ব্যবস্থা করা হবে।