নিষেধাজ্ঞার ১২ দিন পার হলেও প্রণোদনার চাল পায়নি উপকূলের জেলেরা। এতে কষ্টে জীবনযাপন করছেন তারা। অনেক জেলে জাল বুনে বা জাল শুকাতে অলস সময় পার করছেন। মৎস্যবন্দর খ্যাত আলীপুর-মহিপুর-কুয়াকাটা জেলে পল্লীগুলোতে নেই কর্মযজ্ঞ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় ঘাটে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে শত শত নৌকা-ট্রলার। জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন কেউবা ঘাটে অলস সময় পার করছেন। কেউ আবার ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত, কেউ বাড়ি ফিরে গেছেন। ঘাটে নেই হাঁকডাক-কোলাহল। ৬৫ দিনের অবরোধ শেষে সাগরে মাছ শিকারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল জেলেরা, এমন সময় শুরু হয় বৈরী আবহাওয়া। এমন আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে যারা সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ট্রলার হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ফিরেছেন। আবার কারো কারো খোঁজ মেলেনি এখনো। এসব পরিবার মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময় সরকার পুনর্বাসনের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে, সেই চাল নানা জটিলতায় ঠিক সময়ে তারা পান না। কবে পাবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। আজ ১২ দিন অতিবাহিত হলেও চাল পাননি।
জেলে মিজান বলেন, জেলেদের কষ্ট কেউ দেখে না। সরকার ২০ কেজি চাল দেয় তা দিয়ে ৭ জনের পরিবার কীভাবে চলে? কেউ খোঁজ নেয় না। ২০ কেজি করে চাল দেবে সরকার, তা কবে দেবে জানি না। এমনও হতে পারে অবরোধের পরেও দিতে পারে। এই ২০ কেজি চাল যারা পান তাদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে না। অনেক প্রকৃত জেলে চাল পায় না।
পশ্চিম খাজুরা মৎস্যজীবী গ্রাম সমিতির সভাপতি আ. মান্নান মাঝি বলেন, আমরা জেলে মাছ শিকার ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। মাছ শিকার করে পরিবার চালাই। অবরোধের সময় আমাদের ২০ কেজি চাল দেয় সরকার, তা দিয়ে আমাদের কিছুই হয় না। তবুও সরকারের আইনকে সম্মান জানিয়ে মাছ শিকারে যাই না। কিন্তু ভারতীয় জেলেরা আমাদের সমুদ্র সীমানায় এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। অবরোধের পরে সাগরে গিয়ে আমরা মাছ পাই না।
কলাপাড়া উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি মান্নান মাঝি বলেন, জেলেদের অবরোধকালীন পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। অপেক্ষায় ছিলাম ভরা মৌসুমে ইলিশ শিকারের মাধ্যমে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাব। এ বছর তা এখনো সম্ভব হয়নি। অবরোধের পরেও মাছ পাব না। ভারতীয় জেলেরা অবরোধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় প্রবেশ করে প্রচুর ইলিশ শিকার করে নিচ্ছে।
কুয়াকাটা আশার আলো মৎস্যজীবী জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি মো. নিজাম শেখ বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ভবিষ্যতে সমুদ্রে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। জেলেদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, জেলেদের জন্য বরাদ্দ করা চাল খুব দ্রুত বিতরণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, পটুয়াখালী জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৬৩ হাজার ৮৪৮ জন। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ৬৪২ জন জেলে পাচ্ছেন সরকারি প্রণোদনা।