রংপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
এদিকে রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক হলেও ভোটযুদ্ধে তারা এখন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নানা নাটকীয়তায় ঘেরা এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ইলিয়াস আহমেদ (আনারস)। মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু (মোটরসাইকেল)।
নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ানোয় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয় মোছাদ্দেক বাবলুকে। এরপর গত ১২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইলিয়াস আহমেদ বিদ্রোহী প্রার্থী মোছাদ্দেক বাবলুর বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তোলেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে বহিষ্কার হন বদরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। এসবের মধ্যেও টানা ২০ দিন উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা শেষে প্রার্থীরা মুখিয়ে আছেন ভোটারদের দিকে।
সোমবার সকালে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার চেতনা বিদ্যা নিকেতন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। ভোটারদের তেমন উপস্থিতি না থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ব্যানার পোস্টারে ছেয়ে ছিল কেন্দ্রের আশপাশে। প্রার্থীদের পক্ষে সরব ছিল কর্মী ও সমর্থকরা।
ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও গোপন কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার পাশাপাশি ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেখা গেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। বদরগঞ্জসহ জেলার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাঁচজন করে পুলিশ ও চারজন করে আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র্যাবের দুটি মোবাইল টিম ও পুলিশের ১০টি মোবাইল টিম উপজেলাগুলোতে টহল দিচ্ছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছেন।
বদরগঞ্জের চেতনা বিদ্যা নিকেতন ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সঞ্জয় ব্যানার্জী জানান, তার কেন্দ্রে একটি পৌরসভা ও দশটি ইউনিয়নের ১৪৫ জন জনপ্রতিনিধি ভোটার। জেলা পরিষদের সাধারণ সদস্য এখানে দুজন পুরুষ এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে চারজন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের পৃথক দুটি গোপনকক্ষে ভোট প্রদান করবেন ১৪৫ জন।
রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলার একটি সিটি কর্পোরেশন, তিনটি পৌরসভা, আটটি উপজেলা পরিষদ ও ৭৬টি ইউনিয়ন পরিষদের ১ হাজার ৯৫ জন জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন, আটটি ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে ২৯ জন ও তিনটি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে রংপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কেউ মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। গোপন কক্ষ থেকে শুরু করে কেন্দ্রভিত্তিক যে নির্দেশনা আছে, তা ভোটার ও প্রার্থীদের জানানো হয়েছে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশন জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ মনিটরিং করবেন। তারা যদি কোনো অসঙ্গতি দেখতে পান, তবে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিতে পারেন। আমরা সকলের সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশনের প্রত্যেকটি দিকনির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে তৎকালীন সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করেন। এরপর জোট সরকারের আমলে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদ পরিচালনা করে। এরপর প্রথমবারের মতো স্থানীয় এই সরকারে নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর।